Monday, May 2, 2016

হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়ালভী রহ.

[উস্তাজুল আসাতিজা ও মুহাদ্দিস পটিয়া মাদরাসা, চট্টগ্রাম]
জন্ম ও শিক্ষা : হযরত মাওলানা আলী আহমদ বোয়লভী সাহেব ১৯১১ সনে চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা থানার বোয়ালিয়া চুন্নাপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৩০ সনে তিনি জিরি ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় ভর্তি হন এবং সেখান থেকেই দাওরায়ে হাদীস (টাইটেল) পাস করেন। তার হাদীসের প্রধান উস্তায ছিলেন শায়খুল হাদীস ওলিয়ে কামেল হযরত মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ সন্দ্বিপী রহ.।
কর্মজীবন : কর্মজীবনে তিনি ২ বছর বোয়ালিয়া ইসলামিয়া মাদারাসায় শিক্ষকতা করেন। তারপর ১৯৪৪ সনে হযরত মাওলানা মুফতী আযীযুল হক সাহেবের রহ. আহবানে পটিয়া মাদরাসায় যোগদান করেন। তিনি পবিত্র কুরআন, হাদীস, ফেকাহ প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপনা করেন। ১৩৮৩ হিজরী থেকে ১৪১২ হিজরী পর্যন্ত তিনি পটিয়া মাদরাসায় নায়েবে মুহতামিম হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। ১৪১২ হিজরীর পর থেকে ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি পৃষ্ঠপোষকতা মুরুব্বী হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি আরো বহু মাদরাসা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনায় অবদান রাখেন।


আধ্যাত্মিক জীবন : হযরত বোয়ালভী সাহেব রহ. ছাত্রজীবনেই শায়খুল মাশায়েখ  হযরত মাওলানা শাহ জমীরুদ্দীন আহমদ রহ. এর হাতে বায়আত হন। শায়খের ইন্তেকালের পর তারই বিশিষ্ট খলিফা এবং বোয়ালভী সাহেবের উস্তায ওলিয়ে কমেল হযরত আল্লামা মুফতী আযিযুল হক সাহেবের রহ. সাথে আধ্যাত্মিক সম্পর্ক কায়েম করেন। পটিয়া জামেয়ার প্রতিষ্ঠাতা হযরত আল্লামা মুফতী আযিযুল হক রহ. এর খলিফাগণের প্রথম নম্বরে ছিল হযরত বোয়ালভী সাহেব হুজুরের নাম।
মুজাদ্দিদে যমান, মুসলিহে উম্মাহ মুফতীয়ে আযম হযরত আল্লামা মুফতী ফয়জুল্লাহ সাহেবের রহ. সাথেও হযরত বোয়ালভী সাহেবের গভীর সম্পর্ক ছিল। খলিফায়ে মাদানী হযরত মাওলানা আবদুস সাত্তার শাহ সাহেব বলেন, হযরত বোয়ালভী সাহেব মুফতীয়ে আযম হযরত মুফতী ফয়জুল্লাহ সাহেব রহ. এর খেদমতেও যাতায়াত করতেন। হযরত মুফতী আযিযুল হক সাহেব রহ. বলতেন, মাওলানা আলী আহমদ ও মাওলানা নুরুল ইসলাম কদীম আমার বাগানের কাঁটাবিহীন ফুল।
ওফাত : দেশের শীর্ষস্থানীয় বুযুর্গ আলেম ও পীরে কামেল হযরত আলী আহমদ বোয়ালভী সাহেব রহ. ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০০৪ সালে বুধবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম শহরের উপশম হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। ইন্তেকালের সময় তাঁর বয়স ছিল ৯৩ বছর।
হযরত বোয়ালভী সাহেব এর ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত দেশের প্রসিদ্ধ ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র চট্টগ্রাম পটিয়া আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া জমিরিয়া কাসেমুল উলুম মাদরাসার পৃষ্ঠপোষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন। বার্ধক্য অবস্থায়ও তিনি সপ্তাহে একদিন পটিয়া মাদরাসা ছাত্র-শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে বয়ান করতেন। বৃহত্তর চট্টগ্রামের বিভিন্ন মাদরাসার জলসা ও ইসলামী সম্মেলনসমূহে তিনি ওয়াজ করার জন্য সফর করতেন। সাধারণত সকাল ৯টায় বাড়ি থেকে বের হতেন। যোহরের নামাজের পর বয়ান করতেন এবং সন্ধ্যার পূর্বে বাড়ি পৌঁছে যেতেন। তার ওয়াযে তাওহীদ, রেসালত, আখেরাত, ইত্তেবায়ে সুন্নত, আল্লাহর সাথে গভীর সম্পর্ক কায়েম, ইশকে রাসুল, আল্লাহর পথে জীবন পরিচালনা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচিত হত। জান্নাত, জাহান্নাম, হাশর, কবরের আযাব প্রভৃতি বিষয় আলোচনা করে সকলকে তিনি অন্তরে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করা এবং তাকওয়া পরহেযগারী অবলম্বনের আহবান জানাতেন।

No comments:

Post a Comment